বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

| ১৩ চৈত্র ১৪৩০

বিপর্যয় এড়াতে ক্রেডিট সুইস কিনে নিলো ইউবিএস

ষ্টাফ রিপোর্টার

বিপর্যয় এড়াতে ক্রেডিট সুইস কিনে নিলো ইউবিএস

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের মধ্যস্ততায় ৩.২৪ বিলিয়ন ডলারে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইস কিনে নিয়েছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম ব্যাংক ইউবিএস।

রোববার-ঘোষিত এই চুক্তির মধ্যে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইউবিএস ও ক্রেডিট সুইসের জন্য ১০৮ বিলিয়ন ডলার তারল্য সহায়তার বিষয়টিও রয়েছে।

দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতন ঘটছিল ক্রেডিট সুইসের। গত শুক্রবার ব্যাংকটির ভ্যালুয়েশন ছিল প্রায় আট বিলিয়ন ডলার। তবে দু'বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ক্রেডিট সুইসের সব শেয়ার চলে যাচ্ছে ইউবিএস-এর পকেটে। এদিকে এই চুক্তি সম্পন্ন করতে নিজেদের দেশের আইন বদল করতে চলেছে সুইজারল্যান্ড। সাধারণত, এই ধরনের চুক্তির ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের ভোটাভুটি নেওয়া হয়। তবে এই চুক্তির ক্ষেত্রে যাতে শেয়ারহোল্ডারদের 'হস্তক্ষেপ' বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তার জন্য আইনে বদল আনছে সেদেশের সরকার। এদিকে ইউবিএস ক্রেডিট সুইসকে কিনে নেয়ায় শিগগিরই প্রায় ১০ হাজার কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।

সুইস সেন্ট্রাল ব্যাংক জানায়, বর্তমানের নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখার সমাধান হিসেবে ইউবিএস কিনে নিয়েছে ক্রেডিট সুইসকে।

সুইস ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট সুপারভাইজরি অথোরিটি (এফআইএনএমএ) জানায়, বিপর্যয় এড়াতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

ক্রেডিট সুইসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে ইউবিএস যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে, সেজন্য ফেডারেল সরকার ৯.৭ বিলিয়ন ডলারের 'লস গ্যারান্টি' দেয়ার কথাও ঘোষণা করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংকের পতন ঘটার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর জের ধরেই ১৬৭ বছরের পুরনো ক্রেডিট সুইস বিপর্যয়ে পড়েছে।

বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ব্যাংকের অন্যতম হলো ক্রেডিট সুইস। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ব্যাংকের পতন হলে, বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

এদিকে এই চুক্তি সম্পর্কে এখনো দুই ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে চাননি। উল্লেখ্য, বাজারে অংশিদারিত্বের নিরিখে বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হলো ইউবিএস। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই ছিল ক্রেডিট সুইস।

সম্প্রতি ক্রেডিট সুইস তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কথা জানিয়েছিল। এরপর শেয়ারবাজারে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়। এই আবহে ক্রেডিট সুইসকে ৫৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এই আবহে সোমবার শেয়ারবাজার খোলার আগে সপ্তাহান্তে ইউবিএস-এর সাথে এক টেবিলে বসে এই চুক্তি কার্যকর করতে মধ্যস্থতা করে সুইস সরকারের প্রতিনিধিরা।

জানা যায়, ক্রেডিট সুইসের ব্যাপারে শনিবার রাতে জরুরি বৈঠবে বসে সুইস সরকার। ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৬৭ বছরের পুরোনো ব্যাংকটির শেয়ার সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫ শতাংশ কমেছে। প্রতিদিন গ্রাহকরা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার করে তুলে নিচ্ছিলেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। বিনিয়োগকারী ও গ্রাহকদের আস্থা হারাতে থাকায় ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই আবহে এক বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সুইস ক্রেডিট কেনার অফার দিয়েছিল ইউবিএস। তবে ওই অফার ফিরিয়ে দেয় ক্রেডিট সুইস। পরে সরকারের মধ্যস্থতায় দু'বিলিয়ন ডলারে এই চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র : আল জাজিরা

আর এ