শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

| ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঢাকাসহ সারাদেশে শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা’

রোজিনা ইয়াসমিন

‘ঢাকাসহ সারাদেশে শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা’

ঢাকা, ফেব্রুয়ারী ০২, ২০২৩ : রাজধানী ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা। এ সময় তিনি শব্দ দূষণরোধে যানবাহন এবং নির্মাণকাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরত্বারোপ করেন।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম কক্ষে একটি সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, যানবাহন দ্বারা সৃষ্ট শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা। শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।

স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদর বলেন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ক্যাপস'র এক গবেষণায় দেখা যায়, পেশাগত দায়িত্বে থাকা ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ১১.৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩৩.৯ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়। শব্দদূষণসহ পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বেশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।

পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেগম ফারহানা মুস্তারী'র সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিফ কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ডা. এম এ বাকি, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. শিফুন নেওয়াজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. আমজাদ হোসেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জি. মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী। এ ছাড়াও মতবিনিময় সভায় ট্রাফিক পুলিশ ও গাড়িচালকরা শব্দদূষণ নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সংকট ও সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তর মতপ্রকাশ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেগম ফারহানা মুস্তারী বলেন, পরিবেশ অধিদফতর শুরু থেকেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। এ প্রকল্পের অধীনে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে, শব্দদূষণ রোধে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা একান্তই কাম্য।

বিশেষ অতিথি ডা. এম এ বাকি বলেন, ‘শব্দদূষণ একটি নিরব ঘাতক’ এটি পথচারী ও সড়কে কর্মরত ট্রাফিক কন্ট্রোলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করছে। শব্দ দূষণ কানের সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্টের রক্তনালী ব্লক, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। জনস্বাস্থ্যের এই অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জনসচেতনতার জন্য আরও অধিকতরভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করা উচিত এবং জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষ অতিথি বুয়েটের অধ্যাপক শিফুন নেওয়াজ বলেন, প্রশাসনের উচিত উচ্চ ডেসিবল শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন আমদানি বন্ধ করা এবং পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান হর্ন নষ্ট করা। সপ্তাহে যে কোনো একটি দিন বা একটি ঘণ্টা অথবা একটি স্থান হর্নমুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে এবং তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯.৬ শতাংশ জনগণ অর্থাৎ ১ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের শ্রবণ হ্রাসজনিত জটিলতায় ভুগছে। এই শ্রবণ হ্রাসের অন্যতম মূল কারণ শব্দদূষণ। শব্দদূষণ ক্রমাগত এক্সপোজার মানুষের শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ তৈরি করে।

এম কে এম