বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

| ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান

ডেস্ক অফিস

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে জাপান সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং একে সুযোগের দেশে পরিণত করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল ২৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান অবদানের জন্য টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্ট হাউসে চার জাপানি নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী—জাপান অতীতের মতো আমাদের পাশে থাকবে। আমি এও আত্মবিশ্বাসী, অতীতের মতো জাপানের জনগণ তাদের সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রয়োজনে সব সময় পাশে থাকবে।’

বিগত ৫০ বছরের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব এবং ঈর্ষণীয় অংশীদারিত্ব আগামী বছরগুলোতে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধুদের কখনই ভুলি না।’

শেখ হাসিনা দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা স্বীকার করেন, যা এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে সহায়তা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়তে এবং বাংলাদেশকে সুযোগের দেশে পরিণত করতে আমরা নিজেদের উৎসর্গ করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপানের জনগণ বাংলাদেশের দুঃখী মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের কাছে আটজন সম্মানিত ব্যক্তির একটি তালিকা ছিল, যাদেরকে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ‘ফ্রেন্ড অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় আমরা টোকিওতে রয়েছি—বাংলাদেশের আরও চারজন মহান বন্ধুকে সম্মান জানাতে, যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ও সহায়তা করেছেন।’

এ সময় গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে জাপানের জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাদের ন্যায়বিচার, সম্মান, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের আকাঙ্ক্ষা শুনেছেন। আপনাদের কণ্ঠস্বর আমাদের কণ্ঠে শক্তি যোগ করেছে। আপনারা আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সমাবেশ করেছেন এবং একসঙ্গে একটি নির্মম শক্তির বিরুদ্ধে মানব দুর্গ গড়ে তুলেছেন। সূর্যোদয়ের দেশে আমরা মর্যাদা ও মানবতার একটি জাতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।’

জাপানের জনগণ নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাপানি বন্ধুরা আমাদের দুর্দশা বুঝতে পেরে মানবতার স্বার্থে এগিয়ে এসেছে। তারা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু পিছিয়ে যায়নি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তাদের (জাপানিদের) নিঃস্বার্থ আচরণ হুমকির মুখে আমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ছিল জাপানি স্কুলশিশুদের দাতব্য কার্যক্রম, যারা আমাদের লোকেদের সাহায্যের জন্য টিফিনের অর্থ সঞ্চয় ও দান করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাপান সফর একটি অটল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।’

“আমি বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে আমার জাপান সফর ছিল সম্মানের। আমি আজ খুশি, আমার মেয়াদে আমাদের সময়ের পরীক্ষিত বন্ধুত্ব একটি ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ গভীরতা ও মাত্রায় বিকশিত হয়েছে”, যোগ করেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমতা, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপান একই মহৎ ধারণা ও নীতি মেনে চলে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

আর এ